খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গেল ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৩৮৩
  এনবিআরে তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে ফেরার আহবান, অন্যথায় ব্যবস্থা : প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা খানিকটা পিছিয়ে আছি : আলী রীয়াজ

গেজেট ডেস্ক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘গত সাতদিন ধরে আমরা আলোচনা করেছি। বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি হলেও সত্যি কথা হচ্ছে, আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা খানিকটা পিছিয়ে আছি।

রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের সপ্তম দিনের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, এই অগ্রগতির জায়গাটা অর্জন করা দরকার এই কারণে, আমরা কেউই চাই না আগের জায়গাটায় ফিরে যেতে। এটা আগামীকাল, আগামী দিনের বিষয় না। এটা দীর্ঘদিনের বিষয়।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হবো। যে ব্যবস্থা ফ্যাসিবাদী শাসনকে তৈরি করেছে, তার কাঠামোগত পরিবর্তনগুলো আমাদের করতে হবে। এই সংকল্প থেকে সব কিছু পাশে রেখে আমরা সমবেত হয়েছিলাম। আপনাদের কর্মীরা প্রাণ দিয়েছেন, নিপীড়ন সহ্য করেছেন। সেই রক্তের ওপর পা রেখে আমরা এখানে এসেছি।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, কমিশন আপনাদের প্রতিপক্ষ না। কমিশন আপনাদেরই অংশ, আমরা একটা দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। আপনাদের অবস্থানের কারণে কমিশনের নমনীয়তা প্রকাশিত হয়েছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই, আপনারাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনাদের মধ্যদিয়েই এক সময় দেশ শাসিত হবে।

তিনি বলেন, ৭০ অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে কমিশনের যে প্রস্তাব ছিল সেখান থেকে কমিশন আলোচনার মধ্যদিয়ে সরে এসেছে। স্থায়ী কমিটিগুলোর বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাব ছিল এক রকম, কিন্তু আমরা আলোচনার মধ্যদিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত এক জায়গায় এসেছি, সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। উচ্চকক্ষের বিষয়ে দুটি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে একটি, ১০৫ জন সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেবেন। আপনারা এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। সঙ্গতভাবে কমিশন এই জায়গা থেকে সরে এসে ১০০ জন সদস্যের উচ্চকক্ষ তৈরির বিষয়ে একমত হতে পেরেছি। মূলনীতির ক্ষেত্রে কমিশনের কিছু প্রস্তাব ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশনে। সেখানে আমরা আলোচনা করেছি, অনেকটা অগ্রসর হয়েছি। আরো আলোচনা করব।

আলী রীয়াজ বলেন, আর একদিন পর জুলাই মাস। কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমরা আন্তরিক থাকতে চাই। জুলাই মাসের মধ্যেই যেন আমরা একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে পারি। সেই প্রচেষ্টায় আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল। আমরা আশা করেছিলাম আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকীতেই সকলে মিলে সনদে স্বাক্ষর করতে পারব। সেটা কতটা সম্ভব হবে তা আপনাদের ওপর নির্ভর করে। আমরা খানিকটা শঙ্কিত যে, সে জায়গায় যাব না। তবে এটা আমরা বলতে পারি জুলাই মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়ার একটা পরিণতির দিকে যেতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে এগিয়ে যেন কোনো ধরনের সংবিধান সংশোধন না হয়, সেটা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা দরকার। ব্যক্তির ক্ষমতা সীমিত করা প্রয়োজন হচ্ছে এই কারণে, শেষ পর্যন্ত শাসনের ক্ষেত্রে এক ধরনের ব্যক্তিতান্ত্রিকতা তৈরি হয়েছিল এবং তার আশঙ্কাকে আমরা উড়িয়ে দিতে পারছি না। সাংবিধানিকভাবে এ রক্ষাকবচগুলো আমাদের তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

গত বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়নি।

আজকের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া, উচ্চকক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। শুরুতে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে কমিটির কাঠামো ও ক্ষমতার বিষয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করে দলগুলোর সামনে।

এর মধ্যে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে দুইজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে একজনকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। যার বিরোধিতা করেন এনসিপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। পরে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ফ্লোরের সেন্টিমেন্ট যদি একজনের নাম প্রস্তাবের বিষয় আলোচনা হয় তাহলে আমরা সেটা করতে পারি।

প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি বলবৎ রাখার প্রস্তাব করেন। তবে সেটার বিরোধিতা করেন বক্তব্য দেওয়া কয়েকজন। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পদে শূন্যতা সৃষ্টির মত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার বিশেষ পরিস্থিতিতে নিয়োগ করার জন্য কমিটি বলবৎ রাখার প্রস্তাব। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই সরকারের হাতে নিয়োগ করার প্রস্তাব করেন।

এখন পর্যন্ত আলোচনায় সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি নিয়ে এখন পর্যন্ত বিরোধিতা করেন এনডিএম ও এনপিপি। তবে পক্ষে কথা বলেছেন জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাসদ (মার্কসবাদী), সিপিবি, বাসদ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়নি।

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ দাবি করেছন একটি দলকে ইঙ্গিত করে এ কমিটি করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত ৫৩ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামল একমাত্র ফ্যাসিবাদী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের বা অন্যদের ক্ষমতায় সময় সে পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আগামীতে কোন একটি দলকে ইঙ্গিত করে এমন কমিটি করা উচিত হবে না।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!